October 26, 2024, 4:33 pm

সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু প্রতিরোধে দক্ষিণ খান বিএনপি’র ভিন্ন রকম ক্যাম্পেন  শেখ হাসিনাকে ৫৭ বার ফাঁসি দিলেও ক্ষতি পূরণ হবে না: সেলিম উদ্দিন। টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সভায় আ’লীগ নেতাসহ ৯ জনের সদস্যপদ বাতিল পাইকগাছায় ঘুর্ণিঝড় ডানার প্রভাবে অসহায় দিনমজুর সহিলের মাথা গোজার ঠাইটুকু হারিয়ে ফেলেছে খুলনা জেলা কারাগারে হাজতি ও কয়েদির সাথে মারামারি ৭ম আন্তর্জাতিক Flight Safety Seminar 2024 এর সমাপনী অনুষ্ঠান বিগত ১ বছরে দুবার ঝড়ে কপাল পোড়েছে কয়রা বাসির দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তবুও নির্বাহী প্রকৌশলী শারমিনকে গাজীপুরে পদায়ন সাবেক কমিশনার হারুনের দাপটে বসত ভিটে ছড়া এক দম্পতি   খুলনা কয়রায় হামলা করে আসামি ছিনতাই, ৫ পুলিশ সদস্য আহত

ডাকাতচক্রের মূলহোতাসহ ০৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪; বিপুল পরিমাণ পোশাক সামগ্রীসহ ০১ টি কাভার্ড ভ্যান জব্দ।

তামান্না আক্তার হাসিঃ র‍্যাব-৪ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে র‌্যাবের জোরালো তৎপরতা অব্যাহত আছে। এরই ধারাবাহিকতায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায় যে, রাজধানীর মিরপুর, উত্তরাসহ আশুলিয়া, সাভার ও গাজীপুরের বিভিন্ন ফ্যাক্টরি হতে গার্মেন্টস মালামাল বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের নেওয়ার সময় পথিমধ্যে কিছু কিছু কাভার্ড ভ্যান হতে প্রায় ৩০%-৪০% দামী গার্মেন্টস মালামাল চুরি হয়ে যাচ্ছে যার প্রেক্ষিতে ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে ফ্যাক্টরী থেকে মালামাল চট্টগ্রাম বন্দরে নেওয়ার সময় পথিমধ্যে কাভার্ড ভ্যান থামিয়ে গার্মেন্টস পণ্য চুরি করার সময় গত ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ রাতে র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর ডেমরা থানাধীন একটি প্যাকেজিং ভবনের সামনে এবং উক্ত ভবনের দ্বিতীয় তলায় অভিযান পরিচালনা করে আনুমানিক ০৫ কোটি টাকা মূল্যের চোরাইকৃত প্রায় ২৫০০০ পিস গার্মেন্টস সামগ্রী একটি কাভার্ড ভ্যানসহ সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাতচক্রের মূলহোতাসহ ০৭ সদস্য’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ইতোমধ্যে উদ্ধারকৃত গার্মেন্টস মালামালসমূহ সংশ্লিষ্ট পোশাক প্রস্তুতকারী সংস্থার কর্তৃপক্ষ তাদের বলে সনাক্ত করেছে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলো।

মোঃ তাওহিদুল কাউছার (৪২), জেলা-বরিশাল।মোঃ নাজিম (৩৫), জেলা-ভোলা।মোঃ মাসুদ (৩৫), জেলা-পটুয়াখালী।মোঃ দুলাল (৪৫), জেলা-ভোলা।মোঃ মিরাজ উদ্দিন (৩৩), জেলা-নোয়াখালী।আব্দুল আল মাসুদ (৩০), জেলা-ফেনী।মোঃ সাইফুল ইসলাম (২২), জেলা-বাগেরহাট।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, আশুলিয়া ও গাজীপুর থেকে বিভিন্ন দেশে রপ্তানীর গার্মেন্টস মালামাল চুরির ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত মর্মে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, তারা মালামাল পরিবহনে নিয়োজিত চালকদের সাথে সংঘবদ্ধ হয়ে একটি দুর্ধর্ষ ডাকাত চক্র গঠন করে পরস্পর যোগসাজোশে বিগত কয়েক বছর ধরে গার্মেন্টস মালামাল কাভার্ড ভ্যান হতে ডাকাতি করে স্থানীয় মার্কেটে চোরাইপথে কমদামে বিক্রি করে আসছিলো। এতে করে দেশ প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি গার্মেন্টস মালিকগণ প্রতিনিয়ত বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে আসছিলেন। প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এ ধরনের কয়েকটি চক্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সক্রিয় রয়েছে এবং প্রতি বছর শত কোটি টাকা মূল্যের দেশী পোশাক এসব চক্রের মাধ্যমে চুরি হয়ে যাচ্ছে।

গ্রেফতারকৃত ডাকাতচক্রটি সাধারণত কাভার্ড ভ্যানের ড্রাইভারের সাথে সখ্যতা তৈরির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার লোভ দেখানো ও ডাকাতির মালামাল বিক্রয়ের টাকার একটি অংশ দেওয়ার কথা বলে ড্রাইভারকে রাজি করিয়ে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা হতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নিকটবর্তী নির্জন এলাকার ভিতর কিংবা চক্রের সুবিধাজনক স্থানে কাভার্ড ভ্যান পার্কিং করাতো। পরবর্তীতে কাভার্ড ভ্যানটিকে তাদের লোড-আনলোড পয়েন্টে নিয়ে আসলে বিশেষ কৌশলে কাভার্ড ভ্যানের সিলগালা তালা না খুলে কাভার্ড ভ্যানের পাশের ওয়ালের নাট-বল্টু খুলে প্রত্যেক কার্টুনের ভিতরে থাকা মালামালের ৩০%-৪০% মালামাল রেখে আবার পূর্বের ন্যায় কার্টুন সঠিকভাবে বাধাই করে কাভার্ড ভ্যানে লোড করে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে নিয়ে যেতো যাতে করে ফ্যাক্টরী মালিক ও বন্দর কর্তৃপক্ষ কেউই সন্দেহ না করতে পারে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, এই ডাকাতচক্রটি কার্টুনের মালামালের ওয়েট ঠিক রাখার জন্য যে পরিমানের মালামাল কার্টুন থেকে চুরি করে সরিয়ে রাখে ঠিক সে ওজনের জুট কার্টুনের ভিতর মালামালের মাঝখানে দিয়ে কার্টুন প্যাকেট করে। যার ফলে বন্দরে স্ক্যানিং কিংবা ওয়েট মেশিনে কোন ধরণের অনিয়ম পরিলক্ষিত হয় না। এছাড়াও মালামালসহ সম্পূর্ণ ট্রাক/কাভার্ড ভ্যানও মাঝে মাঝে তারা লুট করেছে বলে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে।

গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ তাওহীদুল কাউছার (৪২) বরিশাল জেলার উজিরপুর থানার যোগীকান্দা গ্রামের বাসিন্দা। সে ১৯৯৮ সাল থেকে মিরপুর জুট পট্টি এবং উত্তরায় স্টকলটের ব্যবসা শুরু করার সময়ে বিভিন্ন চোরচক্রের কাছ থেকে গার্মেন্টেসের লুন্ঠিত মালামাল ক্রয়-বিক্রয়ের একপর্যায়ে সে নিজে ও গ্রেফতারকৃত আসামী নাজিম, মাসুদ, দুলাল, মিরাজ, আব্দুল আল মাসুদ, সাইফুলসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে নিয়ে একটি সক্রিয় আন্তঃজেলা ডাকাত চক্র তৈরি করে। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় গার্মেন্টস পণ্য লুন্ঠনের দায়ে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামী নাজিম (৩৫) পেশায় একজন ড্রাইভার। সে ড্রাইভার হওয়ার সুবাদে গার্মেন্টস পণ্য পরিবহনের ড্রাইভারদের সাথে তার পরিচিতি ও সখ্যতা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামী মিরাজ (৩৩) জব্দকৃত কাভার্ড ভ্যানের ড্রাইভার এবং সেই মূলত কাভার্ড ভ্যানের সিলগালা তালা না খুলে কাভার্ড ভ্যানের পাশের ওয়ালের নাট-বল্টু খুলতে পারদর্শী। গ্রেফতারকৃত অপর আসামী মাসুদ ও দুলাল মালামাল লুন্ঠনের সময় গোডাউনের দায়িত্বে থাকতো যেখানে চোরাইকৃত মালামাল লোড-আনলোড করে রাখা হতো। অপর গ্রেফতারকৃত আসামী আব্দুল আল মাসুদ ও সাইফুল গার্মেন্টস পণ্য লোডিং-আনলোডিং শ্রমিক হিসেবে এই চক্রে কাজ করতো। গ্রেফতারকৃত আসামীদের নামে বিভিন্ন থানায় গার্মেন্টস পণ্য চুরির একাধিক মামলা রয়েছে।

এই সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রটি গার্মেন্টস মালামাল চুরি করার ফলে বিদেশী ক্রেতা সঠিকভাবে ও সঠিকসময়ে মালামাল ডেলিভারি না পাওয়ার কারণে মালামালে মূল্য পরিশোধ করতোনা এবং পরবর্তীতে উক্ত ক্রেতারা ক্রয় আদেশ দিতোনা। এছাড়াও সঠিকসময়ে বিদেশী ক্রেতাদের নিকট নির্ধারিত গার্মেন্টস পণ্যটি পৌছে না দেওয়ার ফলে বিদেশী ক্রেতাদের কাছ থেকে দেশি গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপনের ঘাটতি দেখা যায় এবং দিন দিন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্পের ঐতিহ্য ও সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।

উপরোক্ত বিষয়ে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে এরূপ সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী দলের বিরুদ্ধে র‌্যাব-৪ এর জোরালো অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে ভাগ করুন